চুল ঘন করার ঘরোয়া পদ্ধতি। অল্প সময়ে চুল লম্বা ও ঘন করার দারুণ উপায়।
মানুষের সৌন্দর্যের অন্যতম অংশ হচ্ছে চুল। তাই বিশেষত মেয়েদের বা নারীর রূপ বর্ণনায় দীঘল কালো চুলের কথা বলা হয়। আপনার চুল হয়তো দেখতে সুন্দর। কিন্তু যদি তা নিয়মিত পড়তেই থাকে তবে একসময় স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারাতে বাধ্য। চুল পড়া ও চুল পাতলা হয়ে যাওয়া প্রতিটি মানুষের একটি সাধারণ সমস্যা। সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের চুল পড়তে থাকে। অনেকেই চুল ঘন করার উপায় জানতে চেয়ে লিখে সার্চ করেন। তাই চলুন চুল ঘন করার সহজ উপায় সম্পর্কে নেই।
চুল ঘন করার সহজ উপায়
চুল নারী ও পুরুষ উভয়ের অলংকার। যুগে যুগে কবি সাহিত্যিকরা ঘন কালো রেশমি চুলের প্রেমে পড়ে লিখেছেন কত মহা কাব্য তার কোনো শেষ নেই। দিনের পর দিন চুল পাতলা হয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু এটা সবার জন্য বেদনাদায়ক। চুল পড়া কমানোর জন্য এবং চুল ঘন করা যায় খুবই সহজলভ্য উপাদান আপনি ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো সবসময় হাতের কাছেই পাওয়া যায়। তাই আপনি যখন খুশি তা ব্যবহার করতে পারেন। অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করার উপায় হিসেবে প্রথমত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী। কিন্তু আমরা সবাই চাই পেশাদারী চিকিৎসা এড়িয়ে চলতে। তাই ঘরোয়া পদ্ধতিতে অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করার উপায় বেশি গ্রহনযোগ্য। সপ্তাহে মাত্র দুই থেকে তিন দিন খানিকটা সময় বের করে নিয়ে নিম্নে বর্ণিত ঘরোয়া উপায়গুলো ব্যবহার করলে পেতে পারেন ঘন, কালো ও উজ্জ্বল চুল।
ডিম ও অলিভ অয়েল
চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধির জন্য ডিম ব্যবহার হয়ে আসছে অনেক প্রাচীন কাল থেকেই। ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা চুল পড়া রোধ করে। এছাড়াও ডিমে আরো রয়েছে সালফার, জিংক, আয়রন, সেলেনিয়াম, ফসফরাস ও আয়োডিন যা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে এবং চুলের ঘনত্ব বাড়ায়।
যেভাবে তৈরী করবেন
একটি বাটিতে একটি ডিমের সাদা অংশ নিন। এতে এক চা চামচ অলিভ অয়েল ও এক চা চামচ মধু নিন। তার উপকরণগুলো খুব ভালো করে মেশান। যখন এটি মসৃণ পেস্টের আকার ধারণ করবে তখন তা ব্যবহার উপযোগী হবে। সপ্তাহে অন্তত এক বার ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। ভালো ফলাফল পাবেন।
অ্যালোভেরা জেল
অ্যালোভেরা জেল চুল গজানোর জন্য খুবই কার্যকারী। এই জেল চুলে লাগালে চুল পুষ্টি পায়, চুল মজবুত করে, ঘন করে তোলে। যাদের চুল খুব পাতলা তাদের জন্য অ্যালোভেরা জেল খুবই উপকারী।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
এক কাপ অ্যালোভেরা জেল নিন। এর সঙ্গে এক চা চামচ মধু এবং দুই টেবিল চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার মিশিয়ে নিন। সব উপকরণ এক সাথে মিশিয়ে ভালো করে মিশিয়ে একটি হেয়ার প্যাক বানাতে হবে। সেটা সরাসরি আপনার স্ক্যাল্প ও চুলে লাগাতে হবে। দেখবেন আপনার চুল ঘন, কালো ও সুন্দর হতে শুরু করছে।
আমলকী তেল
আমলকী চুলের রুক্ষতা দূর করে চুলের গোড়া শক্ত করে চুলের ঘনত্ব বাড়ায়। আমলকীর বীজ ছাড়িয়ে আমলকী পিষে রস বার করে। তার সাথে ২ চামচ নারকেল তেল, কেশতী পাতার রস মিশিয়ে মিশ্রণটি ভাল করে ফোটান। যখন মিশ্রণটি ভালো ভাবে ফুটে যাবে তখন হাল্কা ভাবে মাথায় ম্যাসাজ করে নিন। এই তেলটি সপ্তাহে ৪-৫ বার ব্যবহার করুন। এই উপকরণটি চুলে পুষ্টি বৃদ্ধি করে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
আমলকী তেল ব্যবহারের জন্য আপনি ২ চা চামচ আমলা পাউডার, ৩ চামচ উষ্ণ নারকেল তেলে ভালো করে মিশিয়ে নিন। তেল ঠান্ডা করে তা চুলের গোড়ায় লাগান। তেল লাগানোর পর ১ ঘন্টা চুলের গোড়ায় বসতে দিন। এরপর চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন।
সরিষার তেল ও মেহেদী পাতা
মেহেদি লাগিয়ে শ্যাম্পু করে মাথায় তেল লাগান। সাধারণত চুলে সরিষার তেল একেবারেই ব্যবহার করা হয় না। কিন্তু সরিষার তেল চুলের গোঁড়াকে মজবুত করে তুলতে বিশেষভাবে কার্যকর একটি উপাদান। যা চুল পড়া রোধ করে দেবে একেবারে। এর পাশাপাশি মেহেদী পাতা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। ফলে চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় বেশ কয়েকগুন।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
২০০ গ্রাম সরিষার তেল একটি পাত্রে নিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন। এবার এতে ১ কাপ পরিমাণ মেহেদী তাজা পাতা দিয়ে চুলায় জ্বাল দিতে থাকুন। যখন দেখবেন মেহেদী পাতা পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছে তখন তা চুলা থেকে নামিয়ে ছেঁকে ঠান্ডা করে নিন। এই তেল সপ্তাহে ৩ দিন চুলে লাগান। সারা রাত তেল লাগিয়ে রেখে সকালে শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেললে সব চাইতে ভালো ফল পাবেন।
ডিম ও মধুর প্যাক
চুল ঘন ও কালো করার জন্য ডিম ও মধু খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। ডিমের সাদা কুসুমের অংশ, এক চামচ মধু ও অলিভ অয়েল এর সাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। সেই প্যাকটি চুলের গোড়ায় ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। যাতে এই প্যাকটি থেকে স্ক্যাল্প পুরোপুরি পুষ্টি সংগ্রহ করতে পারে।
যেভাবে তৈরি করবেন
ডিম ও মধুর প্যাক বানানোর জন্য প্রথমে আপনাকে একটি বাটিতে একটি ডিমের সাদা অংশ নিতে হবে। এতে এক চা চামচ অলিভ অয়েল ও এক চা চামচ মধু নিন। তারপর উপকরণগুলো খুব ভালো করে মেশান। এরপর ব্যবহার উপযোগী হলে ভালো করে চুলের গোড়ায় এবং মাথায় স্ক্যাল্পে ভালো করে লাগাতে হবে। যাতে পুরোপুরি পুষ্টি সংগ্রহ করতে পারে। তারপর সুন্দর করে শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিন। এটি চুল গজানোর পক্ষে খুব কার্যকারী।
ঘৃতকুমারী
ঘৃতকুমারী চুলকে ঘন করতে সাহায্য করে। ঘৃতকুমারী ত্বক এর মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে। চুলের গোড়া মজবুত, চুল গজাতে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি চুলে পুষ্টির যোগান দেয় এবং চুলকে ঘন লম্বা করতে সাহায্য করে। এছাড়া অ্যালোভেরায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিয়োলাইটিক এনজাইম যা আপনার স্ক্যাল্পের ড্যামেজকে সারিয়ে তুলতে পারে। এর ফলে আপনার হেয়ার ফলিকের পুষ্টি হয়। আর চুল বাড়েও খুব তাড়াতাড়ি। আর যদি আপনার খুশকির সমস্যা থাকে তাহলেও অ্যালোভেরা উপকারী।
নিয়মিত চুল ম্যাসাজ করুন
সপ্তাহে একদিন শ্যাম্পু করার আগে গরম তেল দিয়ে চুলে এবং স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন। আমন্ড অয়েল, নারকেল তেল, অলিভ অয়েলর মতো প্রাকৃতিক তেল চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগায় এবং চুলের শুকনো ভাব কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া নিয়মিত স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করলে রক্ত সংবহন বাড়ে এবং চুলের ঘনভাব ফিরে আসে।
সঠিকভাবে চুল আঁচড়ানোর কৌশল
প্লাস্টিকের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ালে স্থির বিদ্যুৎ সৃষ্টি হয় যে কারণে চুল ভেঙে যায়। তাই প্লাস্টিকের চিরুনি ব্যবহার বাদ দিতে হবে। জট ছাড়ানোর জন্য চুল আঁচড়ানোর সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হচ্ছে প্রথমে চুলের শেষের অংশ আঁচড়াতে হবে। তারপর চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লম্বা করে আঁচড়াতে হবে। এই কৌশল চুলে প্রাকৃতিক তেল ছড়িয়ে যেতে সাহায্য করে এবং চুল ভাঙার সমস্যা কম হয়। উপরে যে উপাদানগুলোর কথা বলা হল সেগুলো চুল ঘন করার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী। আপনার যদি বড় ধরনের কোন শারীরিক সমস্যা না থাকে তাহলে এই ঘরোয়া উপায়গুলো নিয়মিত চর্চা করলে চুল অবশ্যই ঘন হবে।
FAQS-
# কিভাবে চুল ঘন করা যায়?
=> অ্যালোভেরা জেল, জবা ফুলের তেল, আমলকী তেল, পেয়াজের তেল ব্যবহার করার মাধ্যমে চুল ঘন করা যায়।
# পেঁয়াজের তেলের পরিবর্তে পেঁয়াজের রস কি ব্যবহার করা যাবে?
=> হ্যাঁ, পারবেন। তবে পেঁয়াজের তেলে চুল বেশি ঘন হয়।
# জবা ফুলের তেল কিভাবে বানাবো?
=> নারকেল তেল গরম করে তাতে জবা ফুলের পাঁপড়ি দিয়ে ৫-১০ মিনিট ফোঁটাতে হবে। ঠান্ডা হয়ে গেলে তেলটি স্ক্যাল্পে লাগাতে হবে।
# পাতলা চুল কিভাবে ঘন করবো?
=> ডিম, মাছ, দুধ, দই নিয়মিত খেতে হবে। ব্রকলি, পালং, বাঁধাকপির মতো সবুজ শাকসবজি চুলের কেরাটিন মজবুত করে চুল ঘন করে তোলে। কমলা, স্ট্রবেরি, পেয়ারার মতো ফল প্রতিদিন খান। ভালো শ্যাম্পু, তেল, কন্ডিশনার আপনার চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে।
# চুলের জন্য সবচেয়ে ভাল তেল কোনটি?
=> চুলের বৃদ্ধির জন্য নারকেল তেল সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তেল। এটি চুলের দ্রুত বৃদ্ধি এবং চুল ভাঙ্গা রোধ করে। নারকেল তেল বাষ্পীভূত হয় না। বরং তার আর্দ্রতা ধরে রাখার বৈশিষ্ট্যের কারণে তা চুলে আটকে থাকে।
শেষ কথা
উপরের এই সব নিয়ম অনুসরণ করে খুব সহজেই চুল পড়া সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব এবং চুল ঘন হবে। মনে রাখবেন প্রতিদিন চুল পড়া স্বাভাবিক। তবে যে জায়গায় চুল পড়ে সেই জায়গায় আবার নতুন চুল গজায়। আবার অনেকের শুধু চুল পড়েই যায় কিন্তু নতুন চুল বের হয় না। আর ধীরে ধীরে সেই জায়গাটিতে চুল অনেক পাতলা হয়ে যায়। তবে অযত্নে অবহেলায় চুল যেন না ঝরে যায়। যেকোনো সমস্যায় চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অথবা ট্রাইকোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করতে ইতস্তত বোধ করবেন না।